স্টাফ রিপোর্টার রাতুল।
বাংলাদেশে দুর্যোগ সহনীয় জাতি গঠনে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ এনামুর রহমান (এম পি) ।ঢাকা-১৯,জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির জন্য দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস (ডিআরআর) ধারণার পথপ্রদর্শক এবং ১৯৭০ সালে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হওয়ার পর সাইক্লোন প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার দুর্যোগ ঝুঁকি কমিয়ে একটি দুর্যোগ সহনীয় জাতি গঠনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ফলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) এর নারীর ক্ষমতায়ন’ উদ্যোগের স্বীকৃতি হিসেবে‘ এসডিজি অর্জনে জেন্ডার-রেসপন্সিভ সেবা’ ক্যাটাগরিতে ‘জাতিসংঘ জনসেবা পদক ২০২১’ এ ভূষিত হয়েছে।
রবিবার (৩ইসেপ্টেম্বর ২৩ইং) ঢাকায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত ‘দুর্যোগ সহনশীলতা সপ্তাহ- ২০২৩’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা তুলে ধরেন।
প্রতিমন্ত্রী ডাঃ এনামুর রহমান (এমপি,ঢাকা-১৯) বলেন, দুর্যোগ ঝুঁকি-হ্রাস ও দুর্যোগ মোকাবিলা বিষয়ক কার্যক্রমকে সমন্বিত, লক্ষ্যভিত্তিক ও শক্তিশালী করা এবং সব ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় কার্যকর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ২০১২ইং,জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০১৫ইং,জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ২০১৬-২০২০ইং,ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ,রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০১১ইং, মৃতদেহ ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা-২০১৬ইং,দুর্যোগ বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলী (এসওডি) ২০১৯ইং ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ দলিল প্রকাশ হয়েছে।
এর মাধ্যমে বিভিন্ন পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে প্রতিবন্ধী,নারী, বয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুসহ দুর্গত জনগোষ্ঠীর চাহিদা নিরূপণ ও বাস্তবায়ন। এছাড়া ২০১৫ থেকে ২০৩০ সাল মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রণীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক।
উল্লেখিত আইন, বিধি,পরিকল্পনা ও নীতিমালার আলোকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক এর লক্ষ্যমাত্রা বিবেচনায় নিয়ে সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় স্বল্প,মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন,দেশের ভৌগোলিক অবস্থান জলবায়ু পরিবর্তন, ভূমি বৈশিষ্ট্য এবং ভয়াবহ ভূমিকম্পের মতো অন্যান্য বিপদের ধারাবাহিকতার কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল। ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স ২০২১ইং অনুসারে দেশটি গত এক দশকে চরম আবহাওয়ার কারণে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে ৭ম। জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ঢাকা ও অন্যান্য শহরাঞ্চলের বিভিন্ন মার্কেট, সচিবালয়, সরকারি-বেসরকারি অফিস এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ডের মহড়া চালানো হয়েছে। বৃহৎ আকারের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং সামরিক-বেসামরিক সমন্বয় বাড়াতে আমরা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ডিজাস্টার রেসপন্স এক্সারসাইজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ (ডিআরইই) আয়োজন করে আসছি।
এনামুর রহমান বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম বদ্বীপ বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। জলবায়ুর ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য দুর্যোগ ঝুঁকি-হ্রাস বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে সরকার ১০০ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ প্রণয়ন করেছে। ২১০০ সাল নাগাদ স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাগুলোর সমন্বয়ে যোগসূত্র সৃষ্টি করবে এ ডেল্টা প্ল্যান। এভাবে দুর্যোগে ঝুঁকি কমিয়ে জীবন ও সম্পদের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে দুর্যোগ সহনীয়, টেকসই ও নিরাপদ দেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকার পরিকল্পিতভাবে কাঠামোগত ও অবকাঠামোগত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে, যা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উচ্চ আয়ের উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সহায়ক হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এ বি তাজুল ইসলাম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান,বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিসেস গুইন লুইস, বাংলাদেশে সুইডেনের রাষ্ট্রদূত অ্যালেক্স বার্গ ফন লিন্ডে এবং বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার ম্যাট ক্যানেল।