জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে এক স্বামীকে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় এক ছাত্রলীগ নেতাসহ চারজনকে আটক করেছে আশুলিয়া থানা পুলিশ।আটককৃতরা হলেন,বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ও তাকে হল থেকে পালাতে সাহায্যকারী আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের হাসান প্রান্ত,৪৬তম ব্যাচের সাগর সিদ্দিকী এবং উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সাব্বির হাসান।পলাতক আছেন ভুক্তভোগীর পূর্বপরিচিত মোঃ মামুনুর রশিদ এবং স্বামীকে আটকে রাখায় সহায়তা ও মারধর করা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ মুরাদ হোসেন।শনিবার দিবাগত রাতে সাভার মডেল থানার পুলিশ ও আশুলিয়া থানার পুলিশ যৌথভাবে এ অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করেন।রোববার(৪ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪ইং)দুপুরে আশুলিয়া থানায় সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পাওয়া ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক উত্তর বিভাগ)মোঃ আবদুল্লাহিল কাফী।তিনি গণমাধ্যমে কে জানান,গতশনিবার দিবাগত রাত ৯.৩০ঘটিকার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়(জাবি)’র মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন জঙ্গলে বহিরাগত ওই নারীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে অভিযুক্ত আসামীরা।এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করে ভুক্তভোগী জানান,আশুলিয়ায় একটি বাসায় স্বামীসহ ভাড়া থাকেন ভুক্তভোগী।পূর্বপরিচিত হওয়ায় একই বাসায় পাশাপাশি কক্ষে ভাড়া থাকতেন মামুনুর রশিদ,বর্তমান তিনি পলাতক আছেন,গত শনিবার তিনি মামলার বাদিকে ফোন করে বলেন,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে মোস্তাফিজুর রহমান নামে এক পরিচিতের সঙ্গে কিছুদিন থাকবেন।মামুন ভুক্তভোগীর স্বামীকে জাবি ক্যাম্পাসে এসে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন।তিনি ক্যাম্পাসে গেলে হলের একটি কক্ষে মুস্তাফিজ ও মুরাদের সঙ্গে পরিচিত হন।এ সময় মামুন তাকে জানান,সাভারের একটি ইলেকট্রনিকসের দোকান থেকে তাদের কিছু টাকা পাওয়ার কথা,কিন্তু দোকানি দিচ্ছেন না।টাকার বিনিময়ে তিনি ভুক্তভোগীর স্বামীকে তার বাসার জন্য টিভি,ফ্রিজসহ অন্যান্য আসবাব নিতে বলেন।বিনিময়ে সমপরিমাণ অর্থ মামুনকে দিয়ে দিতে হবে।মামুন যেহেতু ক্যাম্পাসের হলে থাকবেন,তাই তার জামা কাপড় দরকার ছিল।তিনি মামলার বাদিকে তার স্ত্রীকে কল করে জামা-কাপড়গুলো নিয়ে আসতে বলেন।ওই ব্যক্তি স্ত্রীকে কল করে বললে রাত ৯ ঘটিকায় তিনি ক্যাম্পাসে আসেন। পরে ভুক্তভোগীর স্বামী,মামুন,মুস্তাফিজ ও মুরাদ মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে আসেন।একপর্যায়ে মুরাদ ভুক্তভোগীর স্বামীকে হলের এ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান।সেখানে তাকে বেঁধে মারধরও করেন।মুস্তাফিজ ও মামুন ওই নারীকে হল সংলগ্ন বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশের জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করেন।এ ঘটনার প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ভুক্তভোগী ও তার স্বামীকে ছেড়ে দেন তারা।ছাড়া পাওয়ার পর ভুক্তভোগীরা প্রথমে আশুলিয়া থানায় ও পরে সাভার মডেল থানায় যান।ভুক্তভোগী নারী বলেন, মামুন ভাই আমাদের বাসায় ভাড়া থাকতো।তিনি আমার স্বামীর মাধ্যমে ফোন দিয়ে আমাকে তার জিনিসপত্র নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেতে বলেন।আমি জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে যাই।তখন তিনি আমাদের বাসায় থাকবেন না বলে জানান।এছাড়া তিনি মীর মশাররফ হোসেন হলের মোস্তাফিজ ভাইয়ের কাছে থাকবে বলেও জানান।এরপর মামুন ভাই আমার কাছ থেকে তার জিনিসপত্রগুলো নিয়ে হলে রেখে আসে।পরে আমার স্বামী অন্যদিকে থেকে আসবে বলে আমাকে হলের সামনে থেকে পাশের জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে যায়।তার সাথে মোস্তাফিজ ভাইও ছিল।তখন তারা আমাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।পুলিশ কর্মকর্তা মোঃ আবদুল্লাহিল কাফী আরো বলেন,ভুক্তভোগীদের অভিযোগের পর সাভার মডেল ও আশুলিয়া থানার পুলিশ যৌথভাবে তদন্ত শুরু করে।পরে সাভার থানা এলাকা থেকে মোস্তাফিজুর রহমানকে আটক করা হয়।তা ছাড়া ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করার অভিযোগে তিনজনকে ক্যাম্পাস থেকে আটক করা হয়।সংশ্লিষ্ট মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।মুরাদ ও মামুন পলাতক,তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানান তিনি।