আশরাফুল আলম(ধামরাই প্রতিনিধি)

মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা সমুন্নত রাখার জন্য ভাষা শহীদদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকে স্মরণ করে জাতি বুধবার(২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪ইং)অমর একুশে ভাষা শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করবে।১৯৯৯ইং সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায়,বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হয়।জাতীয় শহীদ দিবস নামেও পরিচিত।বাংলাদেশে পালিত একটি জাতীয় দিবস।১৯৫২ইং সালে তদানীন্তন পূর্ব বাংলায় আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার লক্ষ্যে যারা শহীদ হয় তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের জন্য এই জাতীয় দিবসটি পালন করা হয়।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হল একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গসহ সমস্ত বাংলাভাষী অঞ্চলে পালিত একটি বিশেষ দিবস,যা ১৯৯৯ইং খ্রিস্টাব্দের ১৭ই নভেম্বরে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী,প্রতিবছর ২১শে ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী পালন করা হয়। এটি শহীদ দিবস হিসাবেও পরিচিত।এ দিনটি বাঙালি জনগণের ভাষা আন্দোলনের মর্মন্তুদ ও গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিবিজড়িত একটি দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।১৯৫২ইং সালে এইদিনে(৮ই ফাল্গুন,১৩৫৮, বৃহস্পতিবার)বাংলাকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকায় আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে অনেক তরুণ ছাত্র শহীদ হন। যাঁদের মধ্যে রফিক,জব্বার,শফিউর,সালাম,বরকত উল্লেখযোগ্য এবং এই কারণে এ দিনটি শহীদ দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে।বাংলা ভাষা আন্দোলন ছিল ১৯৪৭ইং থেকে ১৯৫৬ইং পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব বাংলায়(বর্তমান বাংলাদেশে)সংঘটিত একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন। মৌলিক অধিকার রক্ষাকল্পে বাংলা ভাষাকে ঘিরে সৃষ্ট এ আন্দোলনের মাধ্যমে তদানীন্তন পাকিস্তান অধিরাজ্যের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণদাবির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ১৯৫২ইং সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করলেও বস্তুত এর বীজ রোপিত হয়েছিল বহু আগে; অন্যদিকে এর প্রতিক্রিয়া এবং ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী।ক্রমবর্ধমান গণআন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয় এবং ১৯৫৪ইং সালের ৭ই মে পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গৃহীত হয়।১৯৫৬ইং সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান প্রণীত হলে ২১৪ নং অনুচ্ছেদে বাংলা ও উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উল্লিখিত হয়।১৯৭১ইং সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা প্রবর্তিত হয়। সর্বস্তরে বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৭ইং সালে বাংলা ভাষা প্রচলন আইন জারি করে। ইউনেস্কো ১৯৯৯ইং সালের ১৭ই নভেম্বর বাংলা ভাষা আন্দোলন,মানুষের ভাষা এবং কৃষ্টির অধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়ে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে যা বৈশ্বিক পর্যায়ে সাংবার্ষিকভাবে গভীর শ্রদ্ধা ও যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে উদ্‌যাপন করা হয়।বাংলার ইতিহাসে ২১শে ফেব্রুয়ারি এক অমলিন দিন। ১৯৫২ইং সালের এই দিনে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকার ছাত্র-ছাত্রীরা বিক্ষোভে নেমেছিল।পুলিশের গুলিতে বহু শহীদ হন।তাদের আত্মত্যাগের স্মরণে আমরা এই দিনটি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’হিসেবে পালন করি।