স্টাফ রিপোর্টার।
সাভার পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন যানবাহন থেকে হাজার হাজার টাকা চাঁদা আদায় করছে।সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উঠতি বয়সী যুবক ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এ চাঁদা আদায়ের কাজ করছে।সাভার পৌরসভার শাহীবাগ,বাজার রোড,নামাবাজার,বিনোদবাইদ কামাল গার্মেন্টেসের সামনেসহ বিভিন্ন স্থানে ভুয়া রশিদের মাধ্যমে পিকআপ,ট্রাক ও কভার্ড ভ্যান থেকে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে।রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কতিপয় দুষ্ট ব্যক্তি এবং সাংবাদিক নামধারী কিছু দুর্বৃত্ত এ চাঁদাবাজি থেকে সুবিধা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।জানা যায়,সাভার পৌর এলাকার বিভিন্ন শাখা সড়কের চলাচলরত বিভিন্ন কোম্পানির কভার্ড ভ্যান,বাড়ি নির্মাণের ইট,বালু, সিমেন্টবাহী ট্রাক,বাসা-বাড়ি পাল্টানোর মালবাহী ট্রাক, পিকআপ থেকে ভুয়া রশিদ দিয়ে টোল আদায়ের নামে ব্যাপক চাঁদাবাজী করছে তারা।এতে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারাও অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। চাঁদাবাজরা যানবাহন চালকদের হাতে একটি রশিদ ধরিয়ে দিচ্ছে তাতে শিরোনামে সাভার পৌরসভা কর্তৃক ইজারাকৃত সকল যানবাহনের টোল’লেখা রয়েছে।ইজারাদার হিসেবে সোনালী বেগমের নাম রয়েছে।পিকাআপ ৮০ টাকা,ট্রাক ১ পিকাআপ ৮০ টাকা,ট্রাক ১২০ টাকা,কভার্ড ভ্যান ১৫০ টাকা লেখা রয়েছে। চাঁদাবাজদের পক্ষে ৮/১০ জনের কিশোর গ্যাংয়ের একটি দল নিয়মিত মোটা অংকের হাজিরায় এ চাঁদা আদায় করছে। শুধু শাহীবাগ চৌরাস্তার মোড়ে রাত-দিন দুই শিফটে টোল আদায়ের নামে এ চাঁদা আদায় করে।এ ঘটনায় প্রায়ই বিভিন্ন যানবাহনের ড্রাইভারদের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন এই চাঁদাবাজ গ্রুপটি।তবে ওই সড়কের যাত্রী ও চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,চাঁদা আদায়ের জন্য সড়কের মাঝখানে চলন্ত গাড়ি থামানোর কারণে সব সময় যানযট লেগেই থাকে।তাই ওই সড়কে চলাচলরত যানবাহনের মালিক ও ড্রাইভাররা টোলের নামে এ ধরণের চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য প্রশাসনের কার্যকরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।সরেজমিনে আজ মঙ্গলবার শাহীবাগ চৌরাস্তার মোড়ে গিয়ে দেখা যায়,ওই সড়কে চলাচলরত পিকআপ-কভার্ড ভ্যান,লরি,পণ্যবোঝাই চলমান ট্রাক থেকে ৮০ টাকা,১২০ টাকা ও ১৫০ টাকা করে পৌরসভার রসিদ দিয়ে টোলের নামে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এসময় প্রতিবেদকের সামনে পিকআপ(ঢাকা মেট্রো-ন ১৭-৪১৪৬)থেকে রশিদ দিয়ে টোলের নামে টাকা নিতে গেলে কিসের টাকা নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে ওই যুবক টাকা না নিয়ে দ্রুত ওই স্থান থেকে সটকে পড়েন। তার কিছুক্ষণ পর পাশের একটি দোকানের সামনে কথা হয় চাঁদা আদায়কারি ওই যুবকের সাথে। তিনি জানান,তাদেরকে মুরগী হেলাল নামে একজন রশিদ দিয়ে যানবাহন থেকে টাকা তুলতে বলেছে।এটা বৈধ কি অবৈধ তার কিছুই জানেন না তিনি।কিছুক্ষণ পর হেলাল নামের একজন এ প্রতিবেদককে ফোন দিয়ে বলেন,পার্কিং এর জন্য টাকা নেওয়া হয়।ভাই আমরা তো কামলা,এর বেশি কিছু জানি না।আপনি ইজারাদার সোনালী বেগমের স্বামী কুদ্দুস এর সাথে যোগাযোগ করেন সে এগুলো দেখাশোনা করে।পরে তার দেওয়া কুদ্দুস এর মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিয়েও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।তবে এখানে যে চাঁদাবাজি হয় তার মূলহোতা মুরগী হেলাল,রাজা,ইলেকট্রিশিয়ান পারভেজ নাম জানাগেছে। এর মধ্যে ইলেকট্রিশিয়ান পারভেজের বিরুদ্ধে সাভার বাসস্ট্যান্ডের ফুটপাতের একটি অংশে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে বলে জানাযায়। রবিন নামে একজন পিকাপআপ চালক বলেন,এ সড়কে জাতীয় নির্বাচনের পর কিছুদিন চাঁদা আদায় বন্ধ ছিলো।এখন আবার নতুন করে আগের মতো চাঁদাবাজি করছে।আমরা চাঁদা দিতে না চাইলে তারা দল বেধে লাঠি নিয়ে কখনো গাড়ির গ্লাস ভাঙ্গতে আবার কখনওবা মারতে আসে।আমারা তো তাদের সাথে পারবো না। সারাদিন যতবার যাবো ততবারই এই চাঁদা দিতে হয়।তবে এভাবে যদি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চাঁদাবাজি চলে তাহলে আমরা কার কাছে এর বিচার চাইবো।নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক শাহীবাগ চৌরাস্তার একজন ব্যবসায়ী জানান,আমরা ব্যবসায়ীরা কিছুদিন ভুয়া রশিদ দিয়ে চাঁদা আদায়ের কাজে বাধা দিয়েছি। কিন্তু ওরা খুব খারাব লোক,ওদের দল বড়।এ চক্রে বেশির ভাগই কিশোর গ্যাং ও মাদকাসক্ত।যে কোন সময় আমাদের ক্ষতি করতে পারে।এছাড়া এটা তো আমাদের কাজ না।আমাদেরও তো এখানে ব্যবসা করতে হবে।আমরাও এখন আতঙ্কে থাকি।সাভার পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুর রহমানের সঙ্গে এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন,যারা পৌরসভার ভুয়া রশিদ দিয়ে যানবাহনে চাঁদাবাজি করছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা উচিত।সেই সাথে তিনি যানবাহনের চালকদেরকে এসব চাঁদাবাজকে চাঁদা না দিতে নিরুৎসাহিত এবং চাঁদাবাজদের ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিতে বলেন।তিনি আরও বলেন,পৌরসভার মাসিক মিটিংয়ে এসব চাঁদাবাজির বিষয়ে আমরা কথা বলি। পৌরসভার মেয়র এবং আমরা কাউন্সিলররা সব সময় চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছি।এ বিষয়ে সাভার পৌর মেয়র হাজী আব্দুল গণি বলেন,পাড়া-মহল্লা বা শাখা সড়কে টোল আদায়ের জন্য সোনালী বেগম নামে কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি।শুধুমাত্র বাজারগুলোতে কুলি বিটের ইজারা দেওয়া হয়েছে।এছাড়া সোনালী বেগম নামে কাউকে চিনেনও না জানান। এছাড়াও তিনি বলেন,প্রশাসনের উচিত চাঁদাবাজ যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা।উল্লেখ্য,ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের রেডিও কলোনি থেকে ব্যাংক টাউন ব্রিজের মধ্যে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড,ছোটবলি মেহের,গেন্ডা,টিয়াবাড়ি,উলাইলসহ বেশ কয়েকটি পাইকারি কাঁচাবাজার রয়েছে।দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা যানবাহনে করে সবজি,ফলমূলসহ বিভিন্ন পণ্য এখানে ক্রয়-বিক্রয় বরতে নিয়ে আসেন।এ সব যানবাহনে পণ্য উঠানামা করার ক্ষেত্রে পৌরসভা থেকে নির্দিষ্ট হারে টোল আদায়ের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে।