নিজস্ব প্রতিবেদক(সভার)।
সাভার উপজেলার পাড়া মহল্লার অলিগলিতে চলছে মাদকের রমরমা ব্যাবসা,বাধা দিতে গেলে হতে হয় হামলার শিকার,এমনকি হত্যার মত ঘটনাও ঘটে।সাভার উপজেলার আবাসিক এলাকা থেকে শুরু করে শপিংমল কিংবা পাড়া মহল্লা,সড়কের আশেপাশের টং দোকানেও মাদকের বেচাকেনা হচ্ছে হরদম।আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাকি দিয়ে চলছে এসব মরন ব্যাধি মাদক ব্যাবসা।এতে উঠতি বয়সি তরুণরা বিপথগামী হওয়ার পাশাপাশি এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটছে বলে জানান এলাকাবাসী।ইতিমধ্যে এক চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীর ব্যবসায় বাধা দেওয়ায় জীবন দিতে হয়েছে দুই জনকে।ডিবি পুলিশের অভিযানকালে মাদক ব্যবসায়ী স্বপন মিয়ার বাড়ি দেখিয়ে দেওয়ার অপরাধে গত(২ই জুন ২০২৪ইং)বিরুলিয়ায় সীমা বেগম নামের এক এনজিওকর্মীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় ঐ মাদক ব্যবসায়ী ও তার লোকজন,পরে তাকে হত্যা করে মাটিচাপা দেওয়া হয়।এর তিন দিন পর সীমা বেগমের লাশ সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের খনিজনগর এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী স্বপন মিয়ার বাগানবাড়ির পাশ থেকে মাটি চাপা দেওয়া অবস্থায় উদ্ধার করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।এর ঠিক এক বছর আগে এমনই এক ঘটনায় স্বপনের হাতে প্রাণ যায় পৌর এলাকার ইমান্দিপুরের আরেক মাদক ব্যাবসায়ী তোফাজ্জল হোসেন টুনু নামের একজন কে।সন্ত্রাসী স্বপন তাকেও হত্যা করে সাভারের আনন্দপুর সিটিলেনের নিজ বাড়ি মেঝের সাত ফুট মাটির নিচে পুঁতে রেখেছিল।পরে সন্ত্রাসী স্বপন মিয়ার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আনন্দপুর সিটিলেন এলাকায় সন্ত্রাসী স্বপনের বাড়ি থেকে তোফাজ্জল হোসেন টুনু কংকাল উদ্ধার করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা।এবিষয়ে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লবের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,এনজিও কর্মী সীমা আক্তার নামের এক নারী নিখোঁজ হওয়ার পর প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে প্রথমে সাইফুল ইসলাম নামে স্বপনের এক সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়।পরে তার দেওয়া তথ্য মোতাবেক সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের খনিজনগরে স্বপনের বাগানবাড়ির পাশ থেকে মাটিচাপা দেওয়া অবস্থায় সীমা বেগমের অর্ধগলিত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।এ ঘটনায় পুলিশ কুখ্যাত মাদক ব্যাবসায়ী স্বপনকে একটি বিদেশি পিস্তল ও হেরোইনসহ গ্রেফতার করে।পরে স্বপনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়,গত এক বছর আগে নিখোঁজ হওয়া আতেক মাদক ব্যাবসায়ী তোফাজ্জল হোসেন টুনুর লাশও সন্ত্রাসী স্বপন মিয়া তার পৌরসভার সিটিলেনের বাসার নিচে পুঁতে রেখেছে।এরপর সিটিলেনের তার বাড়ির মেঝের সাত ফুট গভীরে খোঁড়াখুঁড়ি করে নিখোঁজ তোফাজ্জলের হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়।সে আরো কোনো হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে কিনা তা রিমান্ডে এনে জানার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধান করে জানা যায়,স্বপনের মতো আরো দুই শতাধিক চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী সাভার ও আশুলিয়ার পুরো মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।তাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে ৩০ থেকে ৫০ জনের বেতনভুক্ত বাহিনী।যারা সীমান্ত এলাকা থেকে মাদকের চালান নিয়ে আসা থেকে শুরু করে মাদকসেবীদের কাছে মাদক পৌঁছে দেয় এ চক্রটি,পাশাপাশি এই চক্রের সাথে নারীদেরও মাদক ব্যবসার টোপ হিসেবে ব্যবহার করছে এরা।এলাকাবাসীর বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা যায়,সাভার ও আশুলিয়ায় তিন শতাধিক মাদক স্পট এবং বহু ভ্রাম্যমাণ মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে।ইয়াবা ট্যাবলেট পকেটে করে নির্বিঘ্নে বহন করা যায় বিধায় ভ্রাম্যমাণ মাদক বিক্রেতার সংখ্যা বেড়েই চলছে।এতে বিভিন্ন আবাসিক এলাকার অলিগলি ইয়াবা,হেরোইন ও ফেঞ্চিডেলের ছড়াছড়ি।ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে মাদক ব্যবসা বন্ধের জন্য তৎপরতা চালালেও বন্ধ করা যাচ্ছে না এ ব্যাবসায়ীদের।এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় কিছু অসৎ কর্মকর্তা কিংবা সদস্যরা মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে নিয়মিত মাসোয়ারা পায় বলে জানা যায়।অন্যদিকে সাভার-আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে অনেক বখাটে যুবক ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক ব্যবসা করেই গাড়ি বাড়ির মালিক হয়েছে।ক্রয় করেছে অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট। বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় থাকার কারণে অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তাদের গ্রেফতার করতে পারছে না বলে জানা যায়।এব্যাপারে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি)মোঃ শাহ জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,মাদক ব্যবসায়ী যেই হোক কোনো ছাড় নেই।এছাড়া সাভারে মাদক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।অপরাধীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে,পুলিশের পাশাপাশি সবাইকে মাদকের বিরুদ্ধে সজাগ ও পুলিশকে মাদক সহ মাদক ব্যাবসায়ীদের ধরিয়ে দেওয়ার আহবান জানান তিনি।