ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের(ডিবি)সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার ও বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ গোলাম সাকলায়েনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।এ বিষয়ে বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের(পিএসসি)জরুরী মতামত চেয়েছে তারা।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পিএসসি’কে দেওয়া এক চিঠিতে এ কথা বলা হয়েছে,তদন্তে উঠে এসেছে,নায়িকা পরীমনির সঙ্গে সাকলায়েনের বিবাহবহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্ক ছিল।সাকলায়েন পরীমনির বাসায় গিয়ে থাকতেন। সাকলায়েনের স্ত্রী তাঁর(সাকলায়েন)সরকারি বাসায় না থাকার সময় পরীমনি গিয়ে রাত্রিযাপন করেছেন।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে(১৩ই জুন ২০২৪ইং)পিএসসি’কে চিঠি দেওয়া হয়।এতে বলা হয়,সরকারি কর্মচারী(শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ইং অনুযায়ী‘অসদাচরণের’কারণে সাকলায়েনকে‘গুরুদণ্ড’হিসেবে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।এছাড়াও বিষয়টি নিয়ে সাকলায়েনের বক্তব্য জানতে তাঁকে ফোন করা হলে,তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।পরে তাকে রকটি ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হয় তার বক্তব্য জানতে।এদিকে পরীমনির সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে এবিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন,বিষয়টি ব্যক্তিগত পর্যায়ে এখনো আসে নাই,ব্যক্তিগত পর্যায়ে যদি আসে তখন আমি কথা বলব।এখন মনে হয় না আমার কোনো কথা বলার দরকার আছে।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়,সাকলায়েন ডিবির গুলশান বিভাগে থাকার সময় নায়িকা পরীমনির সঙ্গে ঘটনাক্রমে তাঁর দেখা হয় এবং যোগাযোগ শুরু হয়।এরই ধারাবাহিকতায় তিনি নায়িকা পরীমনির বাসায় নিয়মিত রাত্রিযাপন করতে শুরু করেন।পুলিশ অধিদপ্তরের এলআইসি শাখা(বৈধ আড়িপাতার দায়িত্বে থাকা)থেকে পাওয়া সাকলায়েনের মুঠোফোনের সিডিআর(বিস্তারিত কল রেকর্ড প্রতিবেদন)বিশ্লেষণ করে তদন্তকারীরা দেখেছেন,২০২১ইং সালের ৪ই জুলাই থেকে পরের এক মাসে সাকলায়েন বিভিন্ন সময়ে(দিনে ও রাতে)নায়িকা পরীমনির বাসায় অবস্থান করেছেন।নায়িকা পরীমনির মুঠোফোনের ফরেনসিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় তদন্তকারীরা দেখেছেন,পরীমনির সঙ্গে সাকলায়েনের কথোপকথন চলত। তা সাধারণ পরিচিতি বা পেশাগত প্রয়োজনে স্থাপিত কোনো সম্পর্কের নয়,বরং অনৈতিক প্রেমের সম্পর্ক।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে,রাজারবাগ মধুমতি পুলিশ অফিসার্স কোয়ার্টার্সে নায়িকা পরীমনির যাতায়াতের সিসিটিভি(ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা)ফুটেজ রয়েছে। এর ফরেনসিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে ও সাক্ষীদের জবানবন্দি অনুযায়ী প্রতীয়মান হয় যে সাকলায়েনের পূর্বপরিকল্পনা ও সম্পূর্ণ জ্ঞাতসারে তাঁর স্ত্রী না থাকা অবস্থায় নায়িকা পরীমনি তাঁর (সাকলায়েন)রাজারবাগের সরকারি বাসায় যাতায়াত করতেন।সেখানে প্রায় ১৭ ঘণ্টা অবস্থান করে ২ই আগস্ট ২০২১ইং রাত দেড়টায় পরীমনি বাসাটি ত্যাগ করেন।তবে সাকলায়েন পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হয়ে সরকারি দায়িত্বের বাইরে নায়িকা পরীমনির সঙ্গে অতিমাত্রায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন বলে উল্লেখ করা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে।এতে বলা হয়,সাকলায়েন বিবাহিত ও এক সন্তানের জনক। এরপরও পরীমনির সঙ্গে তাঁর বিবাহবহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন,পরীমনির সঙ্গে জন্মদিন উদ্যাপন এবং নিজের সরকারি বাসভবনে নিজ স্ত্রীর অবর্তমানে সময় কাটানোর মতো ঘটনা সরকারের ভাবমূর্তি অনেকটাই ক্ষুণ্ন করেছে।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে,এ ঘটনায় সাকলায়েনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় একটি মামলা হয়েছে। তাঁকে কারণ দর্শানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছে।অথচ তিনি এই অভিযোগ থেকে অব্যাহতির দাবি করেছিলেন।তবে জবাব সন্তোষজনক হয়নি।এদিকে ২০২১ইং সালের ৯ই জুন রাতে সাভার থানার ঢাকা বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ১৪ই জুন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন পরীমনি।সেই মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ছিলেন সাকলায়েন।পরীমনির সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগ ওঠার পর তাঁকে বদলি করা হয়েছিল এবং তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল।পরীমনির বিরুদ্ধে ২০২১ইং সালের ১৮ই জুলাই নাসির উদ্দিন মাহমুদ হত্যাচেষ্টা,মারধর,ভাঙচুর ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে আদালতে মামলা করেন।পরে সেই অভিযোগে উপর ভিত্তি করে ২০২১ইং সালের ৪ই আগস্ট পরীমনির বনানীর বাসায় অভিযান চালায় র্যাব।পরে তাঁকে বিদেশি মদসহ গ্রেপ্তার দেখানো হয়।এ মামলায় তিন দফায় মোট সাত দিন তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।গ্রেপ্তারের ২৭ দিন পর ১ই সেপ্টেম্বর পরীমনি কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন বলে জানান তিনি।