বরিশাল সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহারের দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আন্দোলনে কর্মকর্তাদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।এতে উভয় পক্ষের ১০-১২ জন আহত হয়েছেন বলে জানা যায়।পরে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।তবে এ ঘটনার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকটাই থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে দেখা যায়।ঘটনার সামনে অবস্থানে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,আগের দিনের মতো মঙ্গলবার(২ই জুলাই ২০২৪ইং)সকাল থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের নিচতলায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে কর্মকর্তারা কর্মবিরতি শুরু করেন।তাদের কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানার নিয়ে কর্মসূচি পালন করতে কিছু কর্মকর্তা সেখানে এসে অবস্থান করেন।এ সময় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা তাদের বাধা দেন এবং ব্যানার ছিনিয়ে নেন।পরবর্তীতে আবারও ব্যানার ছাড়া ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্মসূচিস্থলের পাশেই অবস্থান নেন।কিছুক্ষণ অবস্থান নেওয়ার পর ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানার আনা হলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা আবারও তাতে বাধা দিলে,একপর্যায়ে এ নিয়ে বাক বিতণ্ডার জের ধরে হামলা ও মারামারির ঘটনা ঘটে।এ সময় উভয় গ্রুপ একে অপরের দিকে চেয়ার ছোড়াছুড়িও করেন।আর পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ঘটনাস্থলে থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে বলে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটনের বন্দর থানার অফিসার্স ইনচার্জ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি)আব্দুর রহমান মুকুল বলেন,বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের দুই গ্রুপের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল।তবে বর্তমানে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি নিরব আছে।এদিকে মারামারির ঘটনায় দুই পক্ষের অনন্ত ১০-১২ জন আহত হয়ে বলে জানা যায়,তাদেরকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।হাসপাতালে ভর্তি আহতরা হলেন- বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডাঃ তানজিম হাসান,সহকারী রেজিস্ট্রার তৌসিকুল ইসলাম রাহাত,সেকশন অফিসার মাহমুদুল হাসান,মিজানুর রহমান ও আবু সায়েম,এছাড়া বাকি আহতদের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি।অন্যদিকে ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও পরিকল্পনা দপ্তরের ডিপুটি ডিরেক্টর আবু হাসান,প্রকৌশল দপ্তরের উপপ্রধান প্রকৌশলী মুরশীদ আবেদীন,অর্থদপ্তরের ডিপুটি একাউন্টস অফিসার ইকবাল মিয়া এবং সহকারী রেজিস্টার আনোয়ার সাদাতও হাসপাতালে ভর্তি।ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা ও আহত মুরশীদ আবেদীন জানান,সরকারের পেনশন নীতিমালার ওপরে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছিলাম। এ সময় বাহাউদ্দিন গোলাপ,নজরুল,জুয়েল মাহামুদের নেতৃত্বে কতিপয় কর্মকর্তা আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানের ওপরে হামলা চালিয়েছেন।পরে তারা হাতে কাছে থাকা চেয়ার,রড,লাঠি দিয়ে তারা আমাদের উপর হামলা চালিয়েছেন।এতে আমাদের ৫-৬ জন কর্মকর্তা আহত হয়েছে,আহিত সবাই শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি।তবে আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আইনি বিচার দাবী জানাই।এদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডেপুটি রেজিস্ট্রার বাহাউদ্দীন গোলাপ বলেন,আমরা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কর্মকর্তারা একসঙ্গেই ছিলাম ও আছি।যাদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র অনুমোদিত সংগঠন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন।কিন্তু সম্প্রতি সরাসরি কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পাওয়া গুটি কয়েক কর্মকর্তা ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠন দাড় করানোর চেষ্টা করছেন।তিনি বলেন,এই সংগঠনের মাধ্যমে জাতিগত ভেদাভেদের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যেও একটি বিভেদ সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। এটি বুঝতে পেরে বিষয়টি আগে থেকেই কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল।তাই তারা ওই সংগঠনের কোনো অনুমোদন দেয়নি।তিনি আরও বলেন,সার্বজনীন পেনশন স্কিমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাহার ও কর্মকর্তাদের জন্য ইউজিসির সুপারিশকৃত অভিন্ন নীতিমালার ১২ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে গত দুই থেকে আড়াই মাস ধরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে।তারা সেখানে অংশগ্রহণ না করে আজ হঠাৎ করে কোনো কারণ ছাড়াই অনুমোদনহীন সংগঠনের ব্যানার নিয়ে আমাদের আন্দোলন স্থলে আসেন।তখন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সদস্যরা তাদের সঙ্গে কথা বলতে যাওয়া মাত্র তারা আমাদের কর্মকর্তাদের সাথে অস্বাভাবিক আচরন শুরু করে,একপর্যায়ে তাদের সাথে বাকবিতন্ডায় জরিয়ে গেলে তারা আমাদের কর্মকর্তাদের উপর চোরাও হয়ে এ হামলা চালিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে ফেলেন এতে আমাদের বেশকিছু কর্মী আহত হয়েছে।এবিষয়ে ডেপুটি রেজিস্ট্রার বাহাউদ্দীন বলেন,হামলা চালিয়ে এখন আমাদের নেতাকর্মী ও সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা হচ্ছে।এর সঠিক বিচার আমরা চাই।এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম বলেন,যে বা যারা দায়ী হবে,তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকবে।তদন্ত অনুযায়ী এর সঠিক বিচার হবে। আমরা কখনোই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হতে দেব না বলে মন্তব্য প্রকাশ করেন তিনি।