নিজস্ব প্রতিবেদক:
অন্তর্বর্তী সরকার এস আলম গ্রুর সঙ্গে চুক্তি না করার নীতিগত একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।এতে শিল্পগোষ্ঠীটি জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার নির্মাণের প্রকল্পে যুক্ত থাকছে না।এদিকে এস আলম গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি না করার বিষয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)ও ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের(ইআরএল) কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন,সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে এ প্রকল্পে এস আলম গ্রুপ যুক্ত হয়েছিল।এই গ্রুপটি এখানে বিনিয়োগের নামে ৫১ শতাংশ মালিকানা নিতে চেয়েছিলেন।এতে কেউ রাজি ছিল না,তবে বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)’র ৬০ শতাংশ মালিকানা সরকারের হাতে রাখার পক্ষে মত দেয়।পরে অংশীদারত্বের বিষয়টি চূড়ান্ত না করে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের সিদ্ধান্ত হয়েছিলো।সমঝোতা স্মারকের খসড়াটি ভেটিংয়ের জন্য জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে পাঠানো হয় আইন মন্ত্রণালয়ে।তাছাড়া সরকার পরিবর্তন না হলে চুক্তিটি ঠেকানো যেত না বলে দাবী করেন বিপিসি কর্মকর্তারা।দেশের একমাত্র জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার ইআরএল।১৯৬৮ইং সালে চট্টগ্রামে এটি তৈরি হয়।এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি বছরে ১৫ লাখ টন জ্বালানি তেল পরিশোধন করতে পারে।এটি পরিচালনা করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীনে থাকা বাংলাদেশ পেট্রলিয়ামকর্পোরেশন(বিপিসি)।তাছাড়া নতুন প্রকল্পে ৩০ লাখ টন সক্ষমতার আরেকটি ইউনিট করার কথাও ছিলো।ইনস্টলেশন অব ইআরএল -২,নামের প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১২ইং সালে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বছরে প্রায় ২৪ কোটি ডলার সাশ্রয় হওয়ার কথা জানিয়েছেন বিপিসি।তবে এস আলম গ্রুপের অংশীদারত্বে পরিশোধনাগার নির্মাণ নিয়ে সম্মত ছিল না,জ্বালানি বিভাগেও।এবিষয়ে জ্বালানি বিভাগের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গণমাধ্যমের কাছে জানিয়েছেন,এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে চুক্তি বাতিলের প্রস্তাব করা হয়।এখন নতুন করে আবার প্রকল্পটি বাস্তবায়নের বিষয়ে করণীয় ঠিক করা হবে।এছাড়া বিদ্যুৎ,জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মো:নূরুল আলম বলেন,জ্বালানি তেলের নতুন পরিশোধনাগার নির্মাণ প্রকল্পটি নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হবে।এটি বাস্তবায়নে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করে বৈধ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান’কে নিয়োগ প্রধান করা হবে।তবে নতুন প্রকল্পে ৩০ লাখ টন সক্ষমতার ইউনিট করার কথা।প্রকল্পটি নিয়ে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়ে এস আলম গ্রুপের বক্তব্য জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও নির্বাহী পরিচালক সুব্রত কুমার ভৌমিকের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।গত ৫ই ফেব্রুয়ারি বিপিসির কাছে পাঠানো চিঠিতে জ্বালানি বিভাগ বলেছিল,ইস্টার্ন রিফাইনারি ও এস আলম গ্রুপের যৌথ অংশীদারত্ব চুক্তির (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ)ভিত্তিতে ইআরএল-২ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমঝোতা স্মারকের আগে বিপিসি,ইস্টার্ন রিফাইনারি ও এস আলম গ্রুপ মিলে সব বিষয়ে সমঝোতা করবে। সমঝোতা চূড়ান্ত হলে ইস্টার্ন রিফাইনারি ও এস আলম গ্রুপ মিলে স্পেশাল পারপাস ভেহিকেল(এসভিপি) কোম্পানি গঠন করবে।ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, প্রস্তাব অনুসারে ইস্টার্ন রিফাইনারির বিদ্যমান পরিশোধনাগার এলাকায় ৩০ থেকে ৫০ লাখ টনের আরেকটি পরিশোধনাগার নির্মাণ করবে এস আলম গ্রুপ।এস আলম গ্রুপের প্রস্তাবিত সমঝোতা স্মারকের খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি একটি কমিটি গঠন করে দেয় বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম কর্পোরেশন(বিপিসি)এর আগে গত ২৯শে জানুয়ারি যৌথভাবে ইআরএল-২ বাস্তবায়নের জন্য জ্বালানি বিভাগের কাছে প্রস্তাব পাঠায় এস আলম গ্রুপ।প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে ইতিমধ্যে জ্বালানি বিভাগে নির্দেশনা এসেছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে এই চিঠিতে।এর সঙ্গে সমঝোতা স্মারকের একটি খসড়া পাঠানো হয়।বর্তমান ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধনাগারটি নির্মাণ করেছিল ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান টেকনিপ।নতুন পরিশোধনাগারটি তাদের মাধ্যমে করার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল সরকার।ইআরএল-২ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ১৯ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা খরচ হওয়ার কথা ছিল।যদিও উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি)বলা হয়েছিল,পরিশোধনাগার চালুর পর ৪ বছর ৯ মাসের মধ্যে এ টাকা উঠে আসবে বলে জানান তিনি।তবে অর্থায়ন নিশ্চিত করা যায়নি।দেশে জ্বালানি তেল পরিশোধনের সক্ষমতা না বাড়ায় বেশি পরিমাণে ডিজেল আমদানি করতে হয়।এতে প্রতিবছর বাড়তি ডলার খরচ করতে হচ্ছে সরকারকে।বছরে ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টন জ্বালানি তেল বিক্রি করে বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম কর্পোরেশন(বিপিসি)।এর মধ্যে ৪৬ লাখ টন ডিজেল।দেশের একমাত্র পরিশোধনাগারটি থেকে পাওয়া যায় ছয় লাখ টন ডিজেল,বাকিটা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)ও ইস্টার্ন রিফাইনারির এক সূত্র থেকে জানিয়েছেন,২০২৬-২৭ইং অর্থবছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা ৮০ লাখ টন ছাড়াতে পারে। আমদানি করা জ্বালানি তেলের মাধ্যমে এ চাহিদা পূরণ করতে হলে দেশের অর্থনীতির ওপর চাপ তৈরি হবে।বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা যাবে না।জ্বালানি নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।দেশে পরিশোধন করা হলে প্রতি লিটার ডিজেলে ১৫ টাকার বেশি সাশ্রয় করা সম্ভব।তাই ইআরএল-২ প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন(বিপিসি)র একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন,পেট্রলের চাহিদা দেশে পূরণ করা হয়।অকটেন ৪০ শতাংশ দেশে উৎপাদিত হয়,বাকিটা আমদানি করে আনা হয়।তবে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় পরিবহনে ব্যবহৃত ডিজেল ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ফার্নেস তেল। ইস্টার্ন রিফাইনারির নতুন পরিশোধনাগার হলে ডিজেলের বড় চাহিদা দেশে পূরণ করা যাবে এবং পেট্রল রপ্তানি করার সুযোগ তৈরি হবে।সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী তামিম বলেন,এস আলম গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করাটা অন্যায্য ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার এটি বাতিল করে ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে।নিজস্ব অর্থায়নে করা হলে এটি আরো বেশি সাশ্রয়ী হবে।দ্রুত পরিশোধনাগারটি নির্মাণ করা উচিত বলে মন্তব্য প্রকাশ করেন তিনি।