বিসিএন ডেস্কঃ
সাভারে ২০২১ইং সালে মাহমুদুর রহমান নামে দাফন করা লাশটি বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর কি না,তা নিশ্চিত হতে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বুধবার (১৬ই অক্টোবর ২০২৪ইং)সকাল ৯ঘটিকার দিকে সাভার রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার(ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম রাসেল ইসলাম নূর এর উপস্থিতিতে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের কমলাপুর জালালাবাদ এলাকায় অবস্থিত জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন মাদ্রাসার নিজস্ব কবরস্থান থেকে তার মরদেহটি উত্তোলন করা হয়।এছাড়া ডাঃ নাজমুন নাহারের তত্ত্বাবধানে প্রায় ৪ ঘন্টা ধরে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেন বিশেষজ্ঞরা।তবে এর আগে গত(৫ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ইং)বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরীর রিট আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি মাহবুবুল ইসলাম এক্সহাইকোর্ট বেঞ্চ হারিছ চৌধুরীর পরিচয় নিশ্চিতের জন্য কবর থেকে লাশ উত্তলন করে ডিএনএ টেস্টের নির্দেশ দেন।এছাড়াও আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাহদীন চৌধুরী।উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়ের বিচার শাখা থেকে(৮ই অক্টোবর২০২৪ইং) একটি নির্দেশনা দেয়া হয়।নির্দেশনা অনুযায়ী ১৪ই অক্টোবর স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্টার জেনারেলের কার্যালয় ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সহকারী রেজিস্টার জেনারেল মো: আখতার জামিল এবং স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো: হাবিবুর রহমানের পৃথক স্বাক্ষরিত চিঠিতে লাশ উত্তোলনে সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী লাশ উত্তোলনে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে পুলিশ ও জেলা প্রশাসন।তবে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়,হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নং-১০৭৮৭/২৪-এ হারিছ চৌধুরীর মৃতদেহ উত্তোলন করে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের জন্য আদালত আদেশ প্রদান করেন।তার মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্টবিভাগে রিট পিটিশন দায়ের করেন।এই মর্মে যে,তার পিতা হারিছ চৌধুরীকে জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন ঢাকা মাদ্রাসার কবরস্থানে মাহামুদুর রহমান নামক ব্যক্তির মৃতদেহদাফন করা হয়।হারিছ চৌধুরীর দেহাবশেষ কবর থেকেউত্তোলন করে তার পরিচয় প্রমাণের জন্য ডিএনএ পরীক্ষাকরানো,পরিচয়ের ইতিবাচক ফলাফল,মৃত্যু সনদ পাওয়া ,ইন্টারপোলের রেড নোটিশ থেকে তার নাম মুছে ফেলা এবং তাকে নিজ জেলায় মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে যথাযথ সম্মানের সঙ্গে দাফন করার আবেদন করেন।এবিষয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,প্রফেসর মাহমুদুর রহমান নামক ব্যক্তিকে এখানে দাফন করা হয়,পরবর্তীতে দাফন করা ব্যক্তিই হারিছ চৌধুরী এমন দাবির প্রেক্ষিতে তার মেয়ের করা উচ্চ আদালতে এক রিটের ভিত্তিতে হারিছ চৌধুরীর পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য লাশ উত্তোলন করে ডিএনএ টেস্টের জন্য ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।এছাড়াও সাভার রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস.এম রাসেল ইসলাম নূর বলেন,হারিছ চৌধুরীর মেয়ের করা রিটে হাইকোর্টের নির্দেশে মরদেহটি উত্তলন করা হয়েছে।এরপরে পরিচয় নিশ্চিতদের জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে।হারিছ চৌধুরীর মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত হলে তাকেমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জানিয়ে দাফন করা হবে।এ সময় সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল মিঞা,পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত)আশিক ইকবাল,পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন)হেলাল উদ্দিন, বিরুলিয়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ ওয়াজেদ মিয়া, সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের (সিএসইউ)কর্মকর্তাসহ গনমাধ্যমকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।উল্লেখ্য,২০২২ইং সালের ১৫ই জানুয়ারি মানবজমিনের একটি প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, হারিছ চৌধুরী করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় মারা গেছেন।অথচ হারিছের প্রবাসে থাকা মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা চৌধুরী এটা নিশ্চিত করেন।বলেন,তার বাবা হারিছ চৌধুরী ২০২১ইং সালের ৩ই সেপ্টেম্বর করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা গেছেন।যদিও তার চাচা আশিক চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন,হারিছ ঢাকায় নয়,লন্ডনে মারা গেছেন।এই খবর প্রকাশের পর অনেকেই বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে উড়িয়ে দেন।এদিকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা একাধিকবার ফোন করে মানবজমিন-এই প্রতিবেদনে সত্যটা জানতে চান।এরপর থেকে মানবজমিন অনুসন্ধান চালাতে থাকে।অনুসন্ধানে বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে মানবজমিনের হাতে।মৃত ব্যক্তি হারিছ চৌধুরী নয়,মাহমুদুর রহমান নামক ব্যক্তি মারা গেছেন, পরবর্তীতে মানবজমিনে প্রকাশিত অনুসন্ধানী রিপোর্টটি দেশ-বিদেশে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করে।অনুসন্ধানে দেখা যায়,সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াররাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী আসলে মারা যাননি।মারা গেছেন প্রফেসর মাহমুদুর রহমান।হারিছ চৌধুরী দীর্ঘ ১৪ বছর গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে আত্মগোপনে ছিলেন বলে এই প্রতিবেদনে উঠে আসে।তিনি ভারত কিংবা লন্ডনেও যাননি।বাংলাদেশের ভেতরেই ছিলেন এবং ঢাকাতেই বেশিরভাগ সময় কাটান।ওয়ান ইলেভেনের পরপরই কিছুদিন সিলেটে অবস্থান করেন হারিছ চৌধুরী।ঢাকায় আসার পর তিনি নাম বদল করেন।নাম রাখেন মাহমুদুর রহমান।দীর্ঘ ১৪ বছর এই নামেই পরিচিত ছিলেন।পরিচয় দিতেন একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক হিসেবে।ঢাকার পান্থপথে প্রায় ১১ বছর কাটিয়ে দেন প্রফেসর মাহমুদুর রহমান এই পরিচয়ে।এছাও তিনি মাহমুদুর রহমান নামে একটি পাসপোর্ট নেন পাসপোর্টের পরিচয় নম্বর BW0952982।এতে ঠিকানা দেওয়া আছে শ্রীমঙ্গল,মৌলভীবাজার।বাবার নাম আবদুল হাফিজ।২০১৮ইং সালে ৬ই সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে এই পাসপোর্ট ইস্যু হয়।পাসপোর্টে দেয়া ছবিতে দেখা যায় এ সময় তার চেহারায় এসেছে অনেক পরিবর্তন।সাদা লম্বা দাড়ি।চুলের রঙ একদম সাদা। বয়সের ছাপ পড়েছে।শুধু পাসপোর্ট নয় জাতীয় পরিচয়পত্রও পেয়ে যান মাহমুদুর রহমান নামে।তার এনআইডি নম্বর হচ্ছে ১৯৫৮৩৩৯৫০৭।পাসপোর্ট ও এনআইডি‘র সূত্র ধরে মানবজমিন অনুসন্ধান চালাতে থাকে।প্রায় দু’মাস অনুসন্ধানের পর মানবজমিন জানতে পারে অধ্যাপক মাহমুদুর রহমানই আলোচিত বিএনপির রাজনৈতিক নেতা হারিছ চৌধুরী।
বিস্তারিত থাকছে দ্বিতীয় কলামে,,,,,,।