সাভার প্রতিনিধিঃ
ঢাকার সাভারে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে শহীদ পরিবারের দায়ের করা এক জোড়া হত্যা মামলায় সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শীর্ষ সন্ত্রাসী মঞ্জুরুল আলম রাজীবের অন্যতম সহযোগী সাভার উপজেলা শ্রমিকলীগ নেতা সালাম ফরাজীকে গ্রেফতার করেছেন সাভার মডেল থানা পুলিশ।বৃহস্পতিবার(৭ই নভেম্বর ২০২৪ইং)ভোর রাতে সাভারের মজিদপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কৃষক লীগের নেতা ফরাজ’ কে গ্রেফতার করা হয়।তিনি সাভার পৌর এলাকার মজিদপুর মহল্লার সাদেক আলী ফরাজির ছেলে।এদিকে দীর্ঘদিন যাবত সাভারের শীর্ষ সন্ত্রাসী সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীবের পালিত ছেলে হিসেবে পরিচয় দিয়ে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে প্রভাব বিস্তার ঘটায়।এবিষয়ে সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক(এসআই)কাদের শেখ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,গত (৫ই আগস্ট ২০২৪ইং)ছাত্র-জনতার আন্দোলনের তোপের মুখে পরে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে গ্রেফতার এড়াতে রাতারাতি ছদ্মবেশ ধারণ করে কট্টরপন্থী নৌকা সমর্থক থেকে বিএনপির এক নেতাকে ম্যানেজ করে এতদিন পলাতক ছিলেন সালাম ফরাজি।তাছাড়া ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের স্বজনরা বেশ কিছু মামলা করেছেন ।এদের মধ্যে প্রায় এক জোড়া মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি সালাম ফরাজী।বৃহস্পতিবার ভোররাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সাভার পৌর এলাকার মজিদপুর এলাকা থেকে সাভার মডেল থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে চালিয়ে সালাম ফরাজী’কে গ্রেফতার করেন।এছাড়াও ছাত্র-জনতা গণহত্যার মামলার আসামিদের গ্রেফতারে তৎপরতায় রয়েছেন সাভার মডেল থানার পুলিশ।থানার তথ্যসুত্র থেকে জানা যায়,কৃষক লীগ নেতা সালাম ফরাজির বিরুদ্ধে ডাকাতি,চাঁদাবাজি,জমি দখল,নারী নির্যাতন, মারধরের পর হত্যা চেষ্টাসহ প্রতারণার একাধিক মামলা রয়েছে।তাছাড়া একাধিক অভিযোগ রয়েছে চক্রের প্রধান সালাম ফরাজের পালিত সন্ত্রাসীরা রাজধানী,সাভার, আশুলিয়া,ধামরাইসহ বিভিন্ন এলাকার বাসস্ট্যান্ড ও রেলস্টেশন এলাকায় ঘোরাফেরা করে।সহজ-সরল যাত্রীদের টার্গেট করে ডাব,কোমল পানীয় কিংবা পানির সঙ্গে বিষাক্ত চেতনানাশক ওষুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করে।আবার কখনও বাস ও ট্রেনে যাত্রীদের পাশে বসে তাদের নাকের কাছে চেতনানাশক ওষুধ ভেজানো রুমাল দিয়ে ধরে যাত্রীদের অজ্ঞান করে থাকে।বিষাক্ত পানীয় সেবন করার বা বিষাক্ত স্প্রের ঘ্রাণ নেওয়ার পর যাত্রী অজ্ঞান হয়ে পড়লে তার সর্বস্ব লুটে নিয়ে সাধারণ মানুষের ভিড়ের মধ্যে মিশে যায়।এমন অপকর্ম করে পুলিশের হাতে একাধিকবার গ্রেফতার হয়ে হাজতবাস করেন এই সালাম ফরাজি।গত ৫ই আগষ্টের পর নিজেকে খেলাফত প্রাপ্ত বিএনপি’র সমর্থক দাবি করে প্রচার করতে শুরু করেন এই প্রতারক।তবে বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় নেতারা তাকে দালাল আখ্যায়িত করে তার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান। এদিকে সালাম ফরাজের গ্রেফতারের খবরে স্বস্তি প্রকাশ করে পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন সাভার,আশুলিয়া,ধামরাইসহ সাধারণ জনগণ ও ভুক্তভোগীরা।এব্যাপারে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল মিঞা সাংবাদিকদের বলেন,সালাম ফরাজীর বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা করা হয়েছে।এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে নিহতের স্বজনদের দায়েরকৃত ২টি হত্যা মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।এছাড়াও সালাম ফরাজের বিরুদ্ধে রাজধানীর মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে বলে জানান তিনি।প্রসঙ্গত,বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন কারীরা গত ৪ই ও ৫ই আগস্ট ২০২৪ইং সাভারে জমায়েত হতে থাকেন।এ সময় স্বৈরাচার শেখ হাসিনার অন্যতম সহযোগী সাভার উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শীর্ষ সন্ত্রাসী মঞ্জুরুল আলম রাজীব এবং ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন।এ ঘটনায় সাভার আশুলিয়ায় শতাধিক ছাত্র-জনতা শহীদ হন।এমন অসংখ্য ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।শহীদের স্বজনরা পরবর্তীতে মামলা করেন।এসব মামলায় আসামিদের ধরতে তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।