নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
রাজধানীর পল্লবীতে মায়ের পরকীয়া প্রেমের বলি ছয় মাসের শিশু কন্যা আমেনা হত্যার ক্লুলেস চাঞ্চল্যকর ঘটনার রহস্য উদঘাটনসহ হত্যার ঘটনায় সাথে জড়িত দুইজন’কে গ্রেফতার করেছেন মহানগর(ডিএমপি)’র পল্লবী থানা পুলিশ।গ্রেফতারকৃতরা হলো-নিহত শিশু আমেনার মা মোসাঃ ফাতেমা বেগম(২৩)ও ফাতেমা বেগমের পরকীয়া প্রেমিক মোঃ জাফর মিয়া(৩৬)।গত শুক্রবার(৩ই জানুয়ারি ২০২৫ইং)গভীর রাতে পল্লবী থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের’কে গ্রেফতার করা হয়।এদিকে পল্লবী থানার তথ্য সূত্রে জানা যায়, গত ৬ই ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখ বিকাল আনুমানিক ৩ ঘটিকায় দিকে দিয়াবাড়ির মেট্রোরেলের ১২৪নং পিলার সংলগ্ন লেকপাড় হতে একটি ব্যাগের মধ্যে কাপড়ে মোড়ানো অবস্থায় একটি শিশুর মৃতদেহ পাওয়া যায়।পরে সড়কে চলাচলরত প্রত্যক্ষদর্শী পল্লবী থানায় খবর দিলে,ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধার করে,পরে নিহত শিশুর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় পুলিশ দেখতে পায় তার গলায় সন্দেহজনক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে পল্লবী থানায় অজ্ঞাতনামা দিয়ে নিয়মিত একটি হত্যা মামলা রুজু করেন।তবে মামলাটি তদন্তের একপর্যায়ে মৃত শিশুটির পরিচয় সনাক্ত করা হয়।পুলিশ নিশ্চিত হয় শিশুটির নাম আমেনা ও তার বয়স ৬ মাস।এছাড়া নিহত শিশুর পরিচয় সনাক্তের পর গোপন তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার(৩ই জানুয়ারি ২০২৫ইং)গভীর রাতে পল্লবী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মৃত শিশুটির মা মোসাঃ ফাতেমা বেগম(২৩)’কে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসা হয়।পরবর্তী সময়ে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন,নিবিড় তদন্ত ও নিহত শিশুটির মা ফাতেমা বেগম’কে ব্যপক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ নিশ্চিত হয় মোঃ জাফর মিয়া(৩৬)নামে এক ব্যক্তির সাথে শিশুটির মা ফাতেমা বেগমের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক থাকার কারণে শিশু হত্যার ঘটনাটি ঘটে।পরবর্তীতে ওই রাতেই জাফর’কে গ্রেফতার করে মহানগর(ডিএমপি)পল্লবী থানা পুলিশ।এছাড়াও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে থানা পুলিশ সূত্রে আরো জানা যায়,গ্রেফতারকৃতরা দুজনেই বিবাহিত এবং পল্লবী এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করত।জাফর একটি গার্মেন্টসে কাজ করে।শিশুটির মা ফাতেমা পূর্বে ওই গার্মেন্টসে কাজ করার সুবাদে জাফরের সাথে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে উঠে।ফাতেমার স্বামী গ্রিলের মেকানিক হিসেবে কাজ করায় কর্মসূত্রে বাসার বাইরে থাকার সুযোগে তারা দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত ছিলো।তাদের মাঝে নিয়মিত শারীরিক সর্ম্পক হতো।গত ৫ই অক্টোবর২০২৪ইং তারিখে রাত আনুমানিক ৮ ঘটিকায় দিকে জাফর ফাতেমার বাসায় শারীরিক সর্ম্পকের জন্য আসে।শিশুটির কান্নাকাটির কারণে তাদের শারীরিক সর্ম্পকে ব্যাঘাত ঘটায় শিশুটিকে প্রথমে স্যুপের মধ্যে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে খাইয়ে অচেতন করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে বালিশ চাপা দিয়ে ও গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে নির্মমভাবে হত্যা করার কথা স্বীকার।পরবর্তীতে বিছানার চাদর দিয়ে শিশুটির লাশ মুড়িয়ে কাপড়ের একটি শপিং ব্যাগে ঢুকানো হয়।অতপর জাফর শপিং ব্যাগে করে লাশটি নিয়ে মেট্রোরেলের একটি পিলারের কাছে ফেলে আসে।এ হত্যাকান্ড সংক্রান্তে গ্রেফতারকৃত ফাতেমা বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।তবে ক্লুলেস চাঞ্চল্যকর এই শিশু হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন সম্পর্কে থানা সূত্রে আরো জানা যায়,মৃত শিশুটির পরিচয় উদঘাটনের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে প্রচারনা চালানো হয় যার ফলে শিশুটির পরিচয় উদঘাটিত হয়।পরবর্তী সময়ে নিবিড় তদন্তের ফলে এই চাঞ্চল্যকর মামলার প্রকৃত তথ্য উদঘাটিত হয়।গ্রেফতারকৃত জাফর ছয়দিনের পুলিশ রিমান্ডে পল্লবী থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।পুলিশ রিমান্ডে জাফরের নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ ও মামলার সুষ্ঠু তদন্ত অব্যাহত রয়েছে বলে জানা যায়।