কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনের পাশের অস্থায়ী সভামঞ্চে সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে প্রবেশ করেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তার ঠিক ৫ মিনিট আগে প্রধানমন্ত্রী সড়কপথে কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনে প্রবেশ করেন।এসময় রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।শনিবার(১১ইনভেম্বর২০২৩ইং)রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের সভাপতিত্বে কক্সবাজার রেলওয়ে উদ্বোধনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বক্তব্য শেষে সুধী সমাবেশ চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।এর মাধ্যমে ১৩৩ বছরের স্বপ্ন অবশেষে হাতের মুঠোয় এসেছে কক্সবাজারবাসীর।১৮৯০ইং সালে ব্রিটিশ আমলে প্রথম পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমারের(সাবেক বার্মা)আকিয়াব বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ।তারপর ১৯১৭ইং থেকে ১৯২১ইং সালে চট্টগ্রাম-দোহাজারী পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মিত হয়েছে।কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে পরিকল্পনা অনুসারে কক্সবাজার পর্যন্ত বাদবাকি অংশে রেলপথ তৈরি করা সম্ভব হয়নি।এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী সিদ্ধান্তে দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেলপথ স্থাপনে জন্য ২০১০ইং সালে প্রথম প্রকল্প হাতে নেয়া হয়।শুরুতে এটি ছিল দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকপ্লের কাজ।এতে মোট ১২৯ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার রেল লাইন নির্মাণের কথা ছিল।পরে রামু থেকে ঘুমধুম অংশের কাজ সাময়িক স্থগিত করা হয়।এখন চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ সম্পুর্ণ সমাপ্ত হল।মোট ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার এ প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক(এডিবি)১৩ হাজার ১১৫ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে।বাকি ৪ হাজার ১১৯ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে।এ প্রকল্পের জন্য কক্সবাজার জেলায় ১ হাজার ৩৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে।প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয়েছে নয়টি রেলওয়ে স্টেশন,চারটি বড় ও ৪৭টি ছোট সেতু,১৪৯টি বক্স কালভার্ট এবং ৫২টি রাউন্ড কালভার্ট।এছাড়াও চলতি বছরের আগস্ট মাসের শুরুতে চট্টগ্রাম অঞ্চলে রেকর্ড বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ি ঢলে রেললাইনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।এরজন্য এ প্রকল্প আরও পিছিয়ে যায় কয়েকটি মাস।রেলওয়ের একটি তথ্যসূত্র থেকে জানা যায়,এ প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজারে ঝিনুকের আদলে আধুনিক রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণের পাশাপাশি দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মোট ৯টি স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে।এ ছাড়াও সংরক্ষিত বন এলাকায় রেললাইন স্থাপন করায় বন্যহাতি ও বন্যপ্রাণী চলাচলের জন্য ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে,যা দক্ষিণ এশিয়ায় মধ্যে প্রথম বলে জানান।এছাড়া সবচেয়ে বেশী আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে,মজেলা শহর থেকে তিন কিলোমিটার পূর্বে ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজিপাড়া এলাকায় ২৯ একর জমির ওপর দৃশ্যমান আইকনিক রেল স্টেশন।ঝিনুকের আদলে তৈরি দৃষ্টিনন্দন এ স্টেশন ভবনটির আয়তন এক লাখ ৮২ হাজার বর্গফুট।ছয়তলা বিশিষ্ট স্টেশনটি নির্মাণে বিশ্বের বিভিন্ন আধুনিক স্টেশনের সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।চার বছরের শ্রমে আইকনিক রেলস্টেশন ভবনটি আজ সত্যিই চোখ জুড়ানো বাস্তবতা বলে মনে করেন সরকার।