সারাদেশে অশিক্ষার অন্ধকারে কেউ থাকবেনা,আধুনিক-প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন শিক্ষিত-দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,মঙ্গলবার(২০শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪ইং)সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একুশে পদক প্রদান অনুষ্ঠানকালে তিনি এ মন্তব্য প্রকাশ করেন।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন,আমরা আমাদের দেশের মানুষকে শিক্ষিত, দক্ষ,আধুনিক,বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।এছাড়াও আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি।সামনে আমাদের লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার।কাজেই কেউই অশিক্ষার অন্ধকারে থাকবে না।সবাই যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেন শিক্ষিত হয়ে বা তাদের দক্ষতা,কর্মশক্তিটা বিকশিত ঘটাতে পারে সেদিকে আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি রেখেছি।টানা চার বারের বিজয়ী প্রধানমন্ত্রী বলেন,আগামী দিনের পথ চলায় ২০৪১ইং সালের মধ্যে বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবো সে ঘোষণা আমরা দিয়েছি।সেই প্রেক্ষিতে পরিকল্পনা তৈরি করেছি, পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় সেগুলো আমরা সংযুক্ত করে বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি।সেভাবেই আমরা এগিয়ে যাবো।একুশের চেতনার কথা তুলে ধরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,জাতির পিতা শুধু আমাদের স্বাধীনতাই দিয়ে যাননি।সেই সঙ্গে একটা মর্যাদাবোধ দিয়ে গেছেন। আমরা বিজয়ী জাতি হিসেবে সারা বিশ্বে আমি মাথা উঁচু করে চলতে চাই।এই কথাটা দেশের সাধারণ মানুষের মনে রাখতে হবে।তিনি বলেন,১৯৭৫ইং সালের পরে বিজয়ী জাতি হিসেবে মর্যাদাটা বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলেছিল।আজকে অন্তত এইটুকু দাবি করতে পারি আবার বাঙালি বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারে।সেই মর্যাদা আমরা ফিরিয়ে এনেছি।এই মর্যাদা সমুন্নত রেখেই আগামী দিনে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে,তাছাড়া কারো কাছে হাত পেতে নয়,ভিক্ষা করে নয়। আত্ম মর্যাদা নিয়ে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে হবে এবং চলবো।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন,একুশ আমাদের শিখিয়েছে মাথা নত না করতে।আমরা মাথা নত করে আর চলবো না,মাথা উঁচু করেই চলবো।গুণীজনদের সম্মাননার কথা তুলে ধরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা বলেন,যারা জনগণের সেবা করে তাদের সেবা করতে পারাটা এটা নিজেকে ধন্য মনে করি।এভাবে বিভিন্ন জায়গায় আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যারা অবদান রেখেছেন বা বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে যারা অবদান রেখেছেন,ক্রিড়া-সংস্কৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা অবদান রেখেছেন তাদের সম্মাননা দিলে আমাদের নতুন প্রজন্মর (অনুপ্রেরণা পাবে),এছাড়াও সমাজের বিভিন্ন জায়গায় যারা অবদান রেখেছেন অবশ্যই তাদের খুঁজে বের করে সম্মাননা দেওয়া হবে। এ বছর একুশে পদক পেয়েছেন ২১ জন।যাদের একজন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সীমান্তঘেঁষা ভোলাহাট উপজেলার মুসরিভূজা গ্রামের বাসিন্দা জিয়াউল হক(৯১)।দই বিক্রির টাকায় তিনি গড়ে তুলেছেন লাইব্রেরি।এছাড়া স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দেওয়াসহ সামাজিক,সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অনুদান দেন সাদা মনের মানুষ হিসেবে পরিচিত লাভ করা জিয়াউল হক।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে জিয়াউল হকের সমাজ সেবামূলক কাজের প্রশংসা করেন এবং পাঠাগারের জন্য একটি ভবন নির্মাণ করে দেওয়ার ঘোষণাও দেন তিনি।প্রধান অতিথির বক্তব্যের আগে ২১ বিশিষ্টজনের হাতে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী শেখ হাসিনা।এবার ভাষা আন্দোলন ক্যাটাগরিতে মরণোত্তর একুশে পদক পেয়েছেন দুজন।তারা হলেন-আশরাফুদ্দীন আহমদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হাতেম আলী মিয়া(মরণোত্তর)।শিল্পকলার বিভিন্ন শ্রেণিতে ১১ জন পেয়েছেন এই পদক।সংগীতে পেয়েছেন জালাল উদ্দীন খাঁ(মরণোত্তর),বীর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণী ঘোষ,বিদিত লাল দাস(মরণোত্তর),এন্ড্রু কিশোর(মরণোত্তর)ও শুভ্র দেব।অভিনয়ে ডলি জহুর ও এম এ আলমগীর, আবৃত্তিতে খান মোঃ মুস্তাফা ওয়ালীদ(শিমুল মুস্তাফা) ও রূপা চক্রবর্তী,নৃত্যকলায় শিবলী মোহাম্মদ এবং চিত্রকলায় শাহজাহান আহমেদ বিকাশ।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও আর্কাইভিংয়ে কাওসার চৌধুরী,সমাজসেবায় মোঃ জিয়াউল হক ও আলহাজ রফিক আহামদ।ভাষা ও সাহিত্যে এবার একুশে পদক পেয়েছেন চার জন।তারা হলেন—মুহাম্মদ সামাদ,লুৎফর রহমান রিটন,মিনার মনসুর ও রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ (মরণোত্তর)।এছাড়া শিক্ষায় প্রফেসর ড.জিনবোধি ভিক্ষু রয়েছেন এ তালিকায়।১৯৫২ইং সালের ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে একুশে পদক প্রদান করা হয়।পুরস্কার হিসেবে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় স্বর্ণপদক,সম্মাননা সনদসহ নগদ অর্থ প্রধান করেন।পদক প্রদান কার্যক্রম পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন।অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি বিষয়ক সচিব খলিল আহমদ,এছাড়াও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সহ আরো অনেকইনহ।