আশুলিয়া প্রতিনিধি:
সাভারের আশুলিয়া থানার ইয়ারপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ও কিশোর গ্যাং লিডার সাব্বির আহমেদ কাব্য ভূঁইয়ার নেতৃত্বে শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৯ জন আহত হয়েছে।এদিকে,হামলার পাঁচ দিনেও মামলা নেয়নি পুলিশ।অথচ,দফায় দফায় হুমকি দেওয়া হচ্ছে অসহায় পরিবারগুলোকে।অন্যদিকে,মামলা নেওয়া হচ্ছে না অভিযোগ অস্বীকার করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছে পুলিশ।তবে এমপি সাইফুল ইসলামের সুপারিশ থাকায় ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শীর্ষ সন্ত্রাসী সুমন আহমেদ ভুঁইয়ার ছেলে কাব্য ভূঁইয়াকে বাদ দিয়ে মামলা নিতে হবে।এমপির সুপারিশ না থাকলে থানা পুলিশের কোন আপত্তি ছিলনা।শিক্ষার্থীরা গোসল শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে বৃহস্পতিবার(২৫ এপ্রিল)দুপুর ২ঘটিকা ৩০ মিনিটের দিকে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার আরফান মার্কেটের সামনে অতর্কিত হামলার শিকার হন।হামলার ঘটনায় কলেজ শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান(২২),নূর হাসনাত নাধভি(১৮),হিমেল ভুঁইয়াসহ(২১)নয় জন আহত হয়। তাদের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিরাপত্তার ঘাটতি থাকায় অন্যত্র চিকিৎসা চলছে। বাকি আহতদের চিকিৎসকের পরামর্শে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।ঘটনার দিন রাতে ভুক্তভোগী নাহিদ হাসান বাদী হয়ে পক্ষে তার ভাই মেহেদী হাসান আশুলিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।তবে ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছে ২০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েও এখনও কোন মামলা কিংবা কাউকেই গ্রেফতার করেনি পুলিশ।আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ এএফএম সাঈদের নির্দেশে অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা ও আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক(এসআই)অমিতাভ চৌধুরী অমিত ২০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছে।ঘুষ নেওয়ার একটি ভিডিও আমাদের হাতে রয়েছে।লিখিত এজাহারে এক ডজন মামলার আসামী ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের(ইউপি) চেয়ারম্যান শীর্ষ সন্ত্রাসী শামীম আহমেদ সুমন ভুইয়ার ছেলে এবং অস্ত্র মামলার আসামি ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি কিশোর গ্যাং লিডার সাব্বির আহমেদ কাব্য ভূঁইয়াকে(২৩)প্রধান করে ৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্ত গ্যাংয়ের সদস্যরা হলেন,মনোয়ার হোসেন রাজকুমার রাজু(২৮),সোহাগ(২৬),মারুফ ভুঁইয়া(২৫),ইমন(২৮) ও ইভান (১৮)।এছাড়াও অজ্ঞাত আরো ২০ জনকে এজাহারে দায়ী করা হয়।এজাহার সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে নাহিদ হাসান তার সহপাঠীদের নিয়ে আশুলিয়ার জামগড়া বটতলা এলাকার রেইন ফরেস্ট পার্কের সুইমিং পুলে গোসল শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। ফেরার পথে জামগড়া এলাকার আরফান মার্কেটে অবস্থিত আজাদের মালিকানাধীন ঝুট গোডাউনের সামনে ইয়ারপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সাব্বির আহমেদ কাব্য ভূঁইয়ার নেতৃত্বে অভিযুক্তরা ধারালো রামদা,রড ও হকিস্টিক নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান।এ সময় নাহিদ হাসানসহ সহপাঠীরা হামলার শিকার হন। পরে স্থানীয় লোকজন এসে তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।এ সময় ভুক্তভোগীদের ব্যবহৃত ১৫০ সিসির একটি পালসার মোটরসাইকেল নিয়ে যায় অভিযুক্তরা।এ ঘটনার ৫ দিনেও এখনও মামলা নেয়নি আশুলিয়া থানা পুলিশ।কাউকে আটকও করা হয়নি। পুলিশের রহস্যময় ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দোষীদের বিচার দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।এই ঘটনায় প্রভাব বিস্তারকারী সাভার-আশুলিয়ার স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের প্রতি তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নাগরিক সমাজ।থানায় অভিযোগদানকারী নাহিদ হাসানের ভাই মেহেদী হাসান বলেন,থানা থেকে বলছে তদন্ত-পূর্বক মামলা হবে, কিন্তু হচ্ছে না।অথচ,চেয়ারম্যান ও কাব্য ভূইয়ার লোকজন শুধু হুমিকই দিয়ে যাচ্ছে।এখন আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এর বিচার হওয়া দরকার।ঘটনার পর গাঁ ঢাকা দিয়েছে প্রধান অভিযুক্ত।তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা ও আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক(এসআই)অমিতাভ চৌধুরী অমিত বলেন,ঘটনার পর থেকে একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে।আমরা তদন্ত করছি। সব সময় ভুক্তভোগীদের খোঁজখবর রাখছি।মামলা আজ হোক অথবা কাল,তবে আগে চিকিৎসা করা প্রয়োজন।তদন্তের অগ্রগতি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে,মামলা নেওয়ার সিদ্ধান্ত একান্ত ওসি স্যারের।তবে এমপি সাইফুল স্যারের পক্ষ থেকে মামলা না নিতে চাপ রয়েছে।এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অফিসার ইনচার্জ(ওসি)এ এফ এম সাইদ বলেন,আমরা মামলা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত।২০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হলে কোন উত্তর না দিয়েই কলটি কেটে দেন তিনি।এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন,ভুক্তভোগীদের আমার কাছে পাঠিয়ে দেন।বিস্তারিত শুনে অবশ্যই এ ঘটনায় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।অন্য এক প্রশ্নে তিনি বলেন,যদি আমার পুলিশ এমন কিছু করে থাকে তাহলে অন্যায় করেছে।জড়িত পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধেও আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।