গত জুলাই মাসে সারাদেশে ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতেও সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা প্রধানের কার্যক্রম ছিলো দেখার মত।জুলাই মাসে সারাদেশে বিরাজমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাঝে বেশ কিছু অরাজকতা ও সহিংসতা থাকা সত্ত্বেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা দান কর্মসূচি রেখেছিল সচল।এছাড়াও সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সায়েমুল হুদার নেতৃত্বে এই হাসপাতালের প্রতিটি চিকিৎসক,সেবিকা এবং সাস্থ্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যথাসময়ে হাসপাতালে উপস্থিত থেকে রোগীদের সেবায় নিজেদের’কে আত্মনিয়োগ করেছিলেন।দেশের সবচেয়ে জনবহুল শিল্পঅঞ্চল সাভার-আশুলিয়ায় প্রায় ৮০-৯০ লক্ষ অস্থায়ী ও স্থায়ী মানুষের বসবাস।এখানে ইপিজেড সহ হাজার হাজার শিল্পকারখানা অবস্থিত রয়েছে।যেখানে কর্মরত নারী-পুরুষ মিলে আছে হাজার হাজার স্থানীয় ও অস্থায়ী লক্ষ লক্ষ কর্মজীবী মানুষ।তাদের একমাত্র চিকিৎসাখাতে আশা ভরসার সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।তবে সাভার উপজেলা সাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছিলোনা কোনো চিকিৎসা ব্যাবস্থাপনার ঘাটতি,প্রত্যেকটা রোগী তার সঠিক সেবা পেয়ে স্বস্থিবোধ করেছেন বলে এমনটা দাবী অনেকের,সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,বেলা বাড়ার সাথে সাথে সাভার উপজেলা সাস্থ্য কমপ্লেক্সে বাড়তে থাকে অসংখ্য ভিন্ন ভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগী চাপ,তবে জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ও আবাসিক চিকিৎসক ধারায় রোগিদের তার সঠিক সেবা করে থাকেন কোনো চিন্তাভাবনা ছাড়াই জিবনের ঝুকি নিয়ে,এদিকে সাস্থ্য সেবাদানের বিষয়ে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সায়েমুল হুদা বলেন,গত জুলাই মাসে দেশে বিরাজমান সমস্যাকে অনুধাবন করে আমি নিজে দিনরাত উপস্থিত থাকার চেষ্টা করেছি আমার কর্মস্থলে।হাসপাতালে প্রত্যেকটি চিকিৎসক,নার্স এবং সাস্থ্য কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে নির্দেশ দেয়া ছিল যে কোন পরিস্থিতিতে যেন হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা কোনোভাবেই যেন বিঘ্নিত না হয়।সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমরা বরাবরের মতো জুলাই মাসেও সন্তোষজনক চিকিৎসা সেবা দিতে পেরেছি বলে জানান তিনি।এদিকে হাসপাতালটির তথ্য সুত্রে জানা যায়,সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সাভারের বহিঃর্বিভাগে গত জুলাই মাসে মোট রোগীর সংখ্যা ছিলো ২৪,১৬৮ জন।অন্তঃবিভাগে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিলো ৫২৩ জন।জরুরী বিভাগের চিকিৎসাকৃত রোগীর সংখ্যা ছিলো ২,৮১৫ জন।এটি ৫০ শ্রদ্ধা বিশিষ্ট হাসপাতাল হওয়া সত্বেও শয্যা ব্যবহারের হার ছিল শতকরা ১১৩.৫ শতাংশ।মোট ৮২ জন গাইনি রোগী ভর্তি ছিল জুলাই মাসে।তাছাড়া ৪১ জনকে নরমাল ডেলিভারির ব্যবস্থাও করা হয়েছিল,এছাড়া ১৬ জন ছিল সিজারিয়ান ডেলিভারি রোগী।উপজেলা সাস্থ্য কমপ্লেক্সে বহিঃবিভাগের গাইনি রোগীর সংখ্যা ছিলো ২,১৩৪ জন।উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সাভারের আওতায় কমিউনিটি ক্লিনিক গুলোতে মোট রোগীর সংখ্যা ছিলো ৩৮,২৪৩ জন।যা বাংলাদেশের অন্য যে কোন উপজেলা চেয়ে সর্বোচ্চ।এদের মধ্যে সাভারের আমিনবাজার উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নেয়া মোট রোগীর সংখ্যা ছিলো ৪,২৩১ জন,এছাড়াও বিরুলিয়া উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের রোগীর সংখ্যা ছিলো ১,১০৪ জন। অন্যান্য উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী সেবা পেয়েছিল।উল্লেখ্য,জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতার সময়েও ১৩৩ জন রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করেছিল এখানে।তার মধ্যে ১১১ জন প্রাথমিক চিকিৎসা পেয়ে বাসায় ফিরে গিয়েছিল এবং রেফার করা হয়েছিল ২১ জনকে হাসপাতালে ভর্তি ছিল একজন।মে থেকে জুলাই পর্যন্ত এই তিন মাসে রোগীর সংখ্যা ছিলো ৮৬১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজনে এসেছিলেন।যাদের মধ্যে ১৯ জন ডেঙ্গু পজেটিভ ছিল।দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয় এবং একজনকে ঢাকায় রেফার করা হয়।গত ২৪শে জানুয়ারি থেকে জুলাই ২৪ তারিখ পর্যন্ত ৩,৫৩৯ জন কুকুরে কামড়ানো রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়।সর্প দংশনে আক্রান্ত ৪১ জন রোগীকেও হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান করা হয়।যার মধ্যে একজন ছিল বিষধর সাপে কাটা রোগী।অপর ৪০ জন ছিলো বিষহীন সাপে কাটা রোগী।বিষধর সাপে কাটা রোগীটিকে উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলা হয়।সব মিলিয়ে এই হাসপাতালটির কার্যক্রম ছিল প্রসংশনীয়।এছাড়া ঢাকার সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সারা দেশের ভিতরে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান সহ এ সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়ে যৌথভাবে প্রথম স্থান অর্জন করেছে।সর্বশেষ ২০২১ইং সালের আগষ্ট মাসের ফলাফলে ৩০০’র ভিতরে সর্বোচ্চ ৭৪.১৩ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যৌথভাবে প্রথম হবার গৌরব অর্জন করেছেন।তবে স্থানীয়দের মতামত অনুযায়ী জনবহুল এই অঞ্চলের চিকিৎসা সেবা অধিকতর উন্নত করতে হলে হাসপাতালটি ৫০ শয্যা থেকে অন্ততপক্ষে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা উচিত বলে মনে করেন সেবা নিতে আসা এলাকার সুশীল সমাজের বেক্তিবর্গ।